Monday, March 30, 2015

মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ-রচনার প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে

গতকাল রাতে রচিত 'মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ' শীর্ষক রচনা নিয়ে একটু ব্যখ্যা প্রদান করার প্রয়োজন মনে করছি।
আমি কখনই কাউকে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতে বলিনি বা পোশাক পরিচ্ছদের অভ্যাসও পরিবর্তন করতে বলিনি।
প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা পারিবারিক এবং ধর্মীয় শিক্ষা থাকে,সেই শিক্ষা থেকেই তারা তাদের পোশাক পরিচ্ছদের অভ্যাস গড়ে তোলে। সেই পোশাক পরিচ্ছদের অভ্যাসের একটি শালীনতার মাত্রা অবশ্যই রয়েছে এবং সেটা পরিবর্তন করতে বলার আমি কেউ না।
আমি শুধু যেটি বলতে চেয়েছি তা হলো,একটি নির্দিষ্ট স্বাভাবিক অঙ্গকে একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গকে নিগৃহীত করবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হোক।
আমি একজন ছেলে হিসেবে বাকি ছেলেদের জানাতে চেয়েছি যে একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে সমাজে বেঁচে থাকা ঠিক কতটা কষ্টকর।
হিসেবটা খুব সহজ, ধরুণ আপনার সামনে একজন অপরিচিত মানুষ দীর্ঘক্ষণ বিনাকারণে আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন।আপনার অস্বস্তি লাগবে। এখন চিন্তা করুন সারা দুনিয়াজুড়ে হাজারখানেক মানুষ সারাক্ষণ আপনার বুকের দিকে তাকিয়ে আছে!
কি ভয়াবহ আতঙ্ক! বুঝতে পারছে?
আসলে পুরুষ হিসেবে জন্মানোর কারণে আমাদের পক্ষে এটি বুঝে ওঠা কষ্টকর এই কষ্টটি আমরা করে উঠতে চাইনা বলেই আমরা নারীর যন্ত্রণাটি বুঝে নারীর পাশে দাড়াইনা-যেখান থেকে সকল নারী নিগ্রহের ব্যাপারগুলো উঠে আসে।
কে কোনটা ঢাকবে কোনটা ঢাকবে না-এটা শিক্ষা দেবার আমি কেউ না।এটা তাকে তার পরিবার,সমাজ,ধর্ম খুব চমৎকারভাবে শিখিয়ে যাচ্ছে। আমি কেবল একজন বালক হয়ে জন্মানোর কারণে আজীবন নিজে বালিকাদের অবর্ণনীয় কষ্ট উপেক্ষা করে এসে মাত্র কিছুদিন আগে এই ভয়াবহ সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছি বলেই বাকি বালকদের জায়গা থেকে একটি বালিকার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মতন যন্ত্রণাটির কথা বলার চেষ্টা করেছি
পৃথিবীর কোন ধর্ম বা নীতি বা আদর্শ কি কারো লজ্জাস্থানের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে থাকার শিক্ষা দেয়?দৃষ্টি সংযত করার বিধান বারংবার শুনেছি আমরা তবু আমরা দৃষ্টি সংযত করিনা! কেনো? কারণ আজন্ম পুরুষ হয়ে থাকার কারণে আমরা মেয়েদের যন্ত্রণাটুকু বুঝতে পারিনা।তাই আমি কেবল একজন বাড়ন্ত মেয়ের স্বাভাবিক একটি শারীরিক অঙ্গ নিয়ে ভোগ করা নিদারুণ দূর্ভোগ আর কষ্টের কথা তুলে ধরতে চেয়েছি।
একজন মানুষের একটি সুস্থ স্বাভাবিক অঙ্গকে তাকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে আমি দাড়াই। একজন মানুষকে তার নিজের শরীরকে ঘৃণা করার কারণ যারা হয়-তাদের বিরুদ্ধে আমি দাড়াই। তার লিঙ্গ দেখে নয়-তার যন্ত্রণা দেখে আমি দাড়াই।
আজকে যদি একটি ছেলের একটি স্বাভাবিক অঙ্গ নিয়ে তাকে অত্যাচার করার ব্যবস্থা করা হয় এবং সে সেটি 'যথাযথভাবে ঢেকে রাখার পরেও' যদি তাকে এটি নিয়ে এমনভাবে হেয় করা হয় যে তার নিজেকে মানুষ মনে না হয়ে অর্ধমানব বা বিকৃত মানব গোছের কিছু মনে হয়-আমি অতি অবশ্যই সেই ঘটনার বিরুদ্ধেও দাঁড়াবো। কিন্তু এমন কোন পরিস্থিতি আজও আসেনি।হাজার বছর ধরে চলে এসেছে মেয়েদের স্তনের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার বিধান।
আমি আবারও বলছি-পৃথিবীর কোন ধর্ম বা কোন বিধান কারো লজ্জাস্থানের দিকে অপ্রীতিকরভাবে তাকিয়ে থাকার বৈধতা দেয়না-সেই অঙ্গ নিয়ে তাকে আক্রমণ করার অধিকার দেবার তো প্রশ্নই আসেনা।
আমার কথা বলার একক কারণ হলো একজন বাড়ন্ত মেয়ের কষ্টটাকে তুলে ধরা এবং একজন ছেলে হয়ে একজন মেয়ের দৃষ্টি দিয়ে জগৎটি দেখার সুযোগ করে দেবার চেষ্টা করা। এই সহজ ব্যাপারটিকে ঘোলাটে করে তুলে নগ্নতাকে বৈধতা দেবার মতন আজেবাজে দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক।
সালেহীন খুব চমৎকার একটা কথা বললো গতকাল, পর্দা কখনোই একমাত্রিক না,এটা দ্বিমাত্রিক।কেউ যদি মনে করে থাকেন যে কোন ধর্ম বা কোন আদর্শ তাকে কোন মানুষের কোন লজ্জাস্থানের দিকে অপ্রীতিকরভাবে তাকিয়ে থেকে সেই সুস্থ স্বাভাবিক অঙ্গটিকে তাকে নিগৃহীত করবার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার বৈধতা দেয় তবে সে অবশ্যই ভুল। এই ধরণের চিন্তাধারা খুব অপ্রীতিকর এবং দূর্ভাগ্যজনক এবং ঠিক এই কারণগুলোতে আমরা নারীদের অধিকার স্থাপন করতে পারছিনা।
যদি আমরা দৃষ্টি সংযত করার ধর্মীয় বিধানকে উপেক্ষা করতে থাকি এবং অনৈতিক দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক চলনবলনকে বাধাগ্রস্থ করতে থাকি তাহলেই বরঞ্চ ধর্মের অপমান হয় সবচেয়ে বেশি এবং ধর্মবিদ্বেষীরা আমাদের অধার্মিক আচরণকে ধর্মের ত্রুটি হিসেবে তুলে ধরার একটি ছুতো পায়।
আমার পর্যবেক্ষণের স্বাভাবিক দৃষ্টিকোনটি ছিলো এই যে-যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পুরুষরা নিজে একজন নারীর জায়গায় দাঁড়িয়ে জীবনটিকে দেখতে পাবোনা,ততদিন পর্যন্ত আমরা নারীর কষ্টটি বুঝতে পেরে নারীর পাশে দাঁড়াতে পারবো না।
যারা মনে করছেনা আমি নগ্নতাকে সমর্থন করছি বা কারো পোশাক আশাককে অমার্জিত করতে বলছি তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থি। অযোগ্য ব্যখ্যাক্ষমতার কারণে হয়তো আমি আমার বক্তব্যটি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি এবং আপনারা আমার কথাটিকে ভুল বুঝেছেন।
কারো সুস্থ স্বাভাবিক অঙ্গকেই তাকে নিষ্পেষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয় এবং আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থানে এমন অনুচিত নীতি-আদর্শ-ধর্মবিরোধী দুর্ভাগ্যজনক আচরণের কোপানলে নারীদের পড়তে হয় বলে আমি নারীদের জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে পুরুষদের নারীদের কষ্টটি উপলব্ধি করার অনুরোধ জানাচ্ছি। নিজেকে নারী হিসেবে কল্পনা করতে যদি কষ্ট হয় তবে কল্পনা না করে পর্যবেক্ষণ করুন।
যখন আপনার মা বা বোনকে যথাযথ শালীনতা বজায় রাখার পরও একটি স্বাভাবিক শারিরীক অঙ্গের দিকে অপ্রীতিকর দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে নিগৃহীত করা হয়-তখন তার কেমন লাগে-সেটি ভাবুন।
লাঠিসোটা নিয়ে বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাবার আগে আসুন আরেকটিবার ভাবি।কোনভাবে কি পাশাপাশি দাঁড়ানো যায়না? একই দেশেরই তো মানুষ আমরা-একসাথে কি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়না?
বিরোধিতা হয়তো সহযোগিতার চেয়ে সহজতর-কিন্তু বিরোধিতা ফলাফলহীন।
তারচেয়ে বরং ফলপ্রসূ সহযোগিতার দিকে আগাবার চেষ্টা করি।

No comments:

Post a Comment