Sunday, March 29, 2015

মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ!

মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ! 
ইশ কি বাজে একটা কথা! ছি! ছেলেটা শেষ পর্যন্ত কি চটি লেখা শুরু করলো?
নাকি একাউন্ট হ্যাক হয়েছে?
না,কোনটিই না।আমি জেনে শুনে বুঝেই স্তনের কথা বলছি। আমি লজ্জার মাথাই খেয়েছি। আমি সবার সামনে স্তনেরকথাই বলবো আজকে।
জ্বী,আমি স্তনের কথা বলছি।
সেই অঙ্গটির কথা বলছি যেটির কারণে আমি আজকে বেঁচে আছি।সেই অর্থে সবচেয়ে আশীর্বাদময় অঙ্গ।
আবার সেই অঙ্গটির কথা বলছি যে অঙ্গটির কারণে একটি মেয়ে চৌদ্দ-পনের বছরের পর থেকে আর কোনদিন সাধারণ মানুষের মতন বাঁচতে পারেনা। সেই অর্থে সবচেয়ে অভিশাপময় অঙ্গ।

এই ভয়াবহ আশির্বাদ আর অভিশাপী অঙ্গ নিয়ে কথা বলার আগে আমার নিজের শরীরের একটি অঙ্গের কথা বলে নেই।

ভুঁড়ির কথা বলছি।
আমি একজন মোটা মানুষ।আমার উদর স্ফীত এবং থলথলে।
হাটতে গেলে আমার সামনে আমার পেট হাটে। বসতে গেলে ভুড়ি শক্ত হয়ে ফুলে ওঠে,জামা ঠেলে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে। আমার ভুড়ি মোটামোটি তিন ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি অর্ধবৃত্তাকার নিরেট চর্বির গোলক।
গোলকটি খুবই অস্বাস্থ্যকর,অপ্রাকৃতিক এবং কদর্য। এবং খুব সম্ভবত সেই গোলকটির জন্য আমার গড় আয়ুস্কালের প্রায় দশ-বিশবছর আগে মৃত্যু হবে।
এরকম একটি মৃত্যুময় গোলা শরীরের মাঝে বয়ে বেড়ানো খুব ভয়ের ব্যাপার।তারচেয়ে বড় কথা,খুবই লজ্জার ব্যাপার। কারণ এই ভুড়ির অবস্থান আমার নিজের দোষ। আমি যদি একটু মন থেকে চাইতাম,তাহলেই এই ভুড়িটা থাকতো না। ভুড়িটি প্রমাণ করে যে আমি একজন অলস,অস্বাস্থ্যসচেতন এবং অকর্মণ্য মানুষ।

শুধু আমি নই,আমাদের সমাজে অনেকেই এই ভুঁড়ির অধিকারী।অবিশ্বাস্য হলেও সত্য-আমার চেয়েও ভয়াবহ ভুড়ি নিয়ে অনেকে চলাফেরা করে। আমাদের সমাজে এই ভুঁড়ি অনেকটুকুই গ্রহণযোগ্য আর স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।
কাউকে কোনদিন ভুঁড়ির কারণে মাথা নিচু করে হাঁটতে দেখিনি।

মাথা নিচু করে আমি হাঁটতে দেখেছি চৌদ্দ-পনের বছরের মেয়েদের। ভুল ক্রোমোসম নিয়ে জন্মানোর অভিশাপে জন্মানোর পর থেকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে আর দশটা মানবসন্তানের মতন হেসে খেলে বড় হতে হতে-হঠাৎই তার বুকটা একটু উঁচু হতে শুরু করে।
সাথে সাথে সে শিখে ফেলে কি ভয়াবহ লজ্জার একটা জিনিস এটা!কি ভয়াবহ গোপন।
নিচে একপরত কাপড় দিয়ে চেপে পিষে লুকিয়ে রাখতে হবে-তার উপরে আরো এক পরত কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে-তারও উপরে আরো এক টুকরো আলগা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।তারপরও একটু উঁচু হয়ে থাকবেই। ততটুকুর দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকবে রাস্তার সবাই। একশ পরত কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলেও হাটার সময় ঠিকই হাতের নিচ থেকে চোরা চোখে তাকিয়ে দেখে নেবে নিষ্পাপ মেয়েটির স্তনযুগল।
আর সেই দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিষ্পাপ মেয়েটি মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে হনহন করে হাঁটতে থাকবে।ভয়ে তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে যাবে। শীষের শব্দ শুনে সে কান চেপে ধরার জন্য হাত তুলতে যাবে-তারপর আবার ভাববে-হাত তুলতে গেলে যদি ওড়না সরে যায়!
কি ভয়াবহ আতঙ্ক! কল্পনা করতে পারা যায়!
অথচ স্তন খুবই স্বাভাবিক একটি অঙ্গ। আমার মায়ের আছে এবং আপনার মায়ের আছে এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কথা-শীষ দেয়া ছেলেটার মায়েরও এবং আছে দেখেই আমরা আছি। সেই স্তনও যথেষ্ঠই স্ফীত-কারণ স্ফীত না হলে সেটি আমাদের শৈশবে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন করতে পারতো না।
সেই স্তন জননীর হবার আগে কোনদিন কোন কুমারীর ছিলো।আর সেই কুমারীরও তখন সেই স্তনের গলা টেপা শিখতে হয়েছে এইরকম শীষ দেয়া অন্য যুবকদের জন্য।
যুগ পেরিয়ে যায়-শীষ তবু থামেনা! ভয়ানক এক শীষ সময়ের পর্দা ছিড়ে কানে ঝনঝন করে যায়।
এই ছেলেগুলো শীষ কেনো দিচ্ছে? কে তাদের শীষ দিতে শিখিয়েছে?
স্তন উঁচু এবং হাটার সময় সামান্য দোলে-এজন্য শীষ দিচ্ছে?
স্তনের চেয়ে তো ভূড়ি অনেক উঁচু! হাটার সময় ভুঁড়ি অনেক বেশি দোলে-তাই দেখে ওরা শীষ দেয়না কেনো?
স্তনের চেয়ে বরং ভুঁড়ি দেখে শীষ দেয়াই বেশি যৌক্তিক। ভুঁড়ি একটা অস্বাভাবিক দৃশ্য-স্তন নয়!স্তন স্বাভাবিক!

তবু আমাদের সমাজের হাজার হাজার স্থূলকায় মানুষের অপ্রাকৃতিক,অপ্রয়োজনীয় এমনকি জীবনঘাতি ভুঁড়ির দৃশ্য আজ খুব স্বাভাবিক। কেউ সেটি আলগা একটা কাপড়ে ঢেকে দিতে আসেনা।
কিন্তু অতি প্রাকৃতিক, অতিপ্রয়োজনীয় এমনি জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য একটি অঙ্গকে যখন এতই অস্বাভাবিক যে সেইটাকে তিন পরত কাপড় দিয়ে চেপে পিষে লুকিয়ে রাখতে হয়।
এই চেপে পিষে লুকিয়ে রাখার থেকেই একটা বাচ্চা হঠাৎ করে মেয়ে হয়ে যায়। জীবনের অর্ধেক সময় সে কাটিয়ে দেয় তার বুক ঢাকতে ঢাকতে। দরজা খোলবার আগে তার দৌড়ে ওড়না খুঁজতে হয়, ছাদে যাবার আগে ওড়না খুঁজতে হয়, এমনকি বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাবার সময়ও ওড়না খুঁজতে হয়। নাহলে সেই শুভাখানকি বন্ধুটিই জ্ঞান দিয়ে বসবে-তোর তো এরকম কাপড় পরা উচিত না। ওরকম করে কাপড় পর! কাপড়ের উপর ওড়না পর।
পরেরদিন মেয়েটা ওড়না পরে বের হবে।তখন শুভাখানকি বলবে-দোস্ত তোর ওড়নাটা সরে গেছে।ঠিক কর।
মেয়েটি ততদিনে এতই মানসিকভাবে ভোঁতা হয়ে গেছে যে সে জিজ্ঞেসও করবে না-আমার ওড়না যে বুকে নেই,সেটা তুই দেখলি কি করে? তুই কি তাকিয়ে ছিলি?
কারণ মেয়েটি জানে,সবাই তাকিয়ে আছে।সবাই তাকিয়ে থাকে।কারো আর কোন কাজ নেই তাকিয়ে থাকা ছাড়া। তাকিয়ে থাকাই সবার কাজ,আর সবার থেকে লুকিয়ে রাখাই মেয়েটার কাজ।কারণ মেয়েটারই তো দোষ! মেয়েটারই তো ভুল। তার স্তন গজালো কেন?
মেয়েটির সহ্য করতে হবে। সহ্য করে বড় হতে হবে। এরপর বিয়ে করতে হবে। এরপর একদিন বাচ্চা হবে। তখন সেই বাচ্চার কান্না আর এই পিষ্ট,দলিত লুকায়িত স্তনযুগল ছাড়া আর কেউ থামাতে পারবে না।
ইশ! একদিন যদি পৃথিবীর সব মা রা একত্রে মিলে ঠিক করে যে তারা তাদের নবজাতককে দুধ খাওয়াবে না, না খাইয়ে স্বামীর হাতে দিয়ে বলবে-নাও-তোমরা না মহান পুরুষ জাতি! এবার থামাও দেখি পারলে কান্না! মাতৃদুগ্ধ বের করো পারলে তোমার মহান পৌরুষত্বের অহংকার টিপে টিপে।
কিন্তু এই কথাগুলো মায়েরা বলবে না।কারণ মায়েরা মেয়ে থাকতেই মেয়ে হওয়া শিখে গেছে। তারা বুদ্ধিমতী-বিচক্ষণ।সমাজে টিকে থাকতে শিখেছে। তারা সমাজে টিকে থাকে, টিকে থেকে সন্তান সন্ততীর জন্ম দেয়। সন্তান মেয়ে হলে সে আবার বুক পিষে মাথা নিচু করে হাটে,ছেলে হলে অচেনা অজানা একটা মেয়ের ওড়নার ফাঁকে তাকায়।
এভাবে হাজার হাজার বছর ধরে চলছে। কেউ প্রশ্ন করেনা। ছেলেরা তো করেইনা-তারা মহাসুখী! মেয়েরাও করেনা। কারণ তারা সবাই ঐ বোকা মেয়েটা হতে চায়না-

এক দেশে ছিল এক বোকা মেয়ে,

সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো।
কারণ,মেয়েটা খালি বোকা বোকা প্রশ্ন করতো,
প্রশ্নগুলো বাকি সবাইকে বোকা করে দিতো।
এমন প্রশ্ন করতে নেই,বোকা মেয়েটা জানতোনা
তাই বোকা মেয়েটা এতো বেশি বোকা ছিলো।

কিন্তু বোকা মেয়েটির মা ছিলো বুদ্ধিমতি
তিনিও একদিন বোকা ছিলেন;এখন বুদ্ধিমতি
তাই তিনি জানেন
কিভাবে বোকা মেয়েকে বুদ্ধিমান বানাতে হয়
তিনি অনেক খুজে খুজে
একটা বহুমূল্য ওড়না কিনলেন মেয়ের জন্য।
ভাবলেন,ওড়না দিয়ে কান,মাথা,বুক পেচিয়ে দিলে
বোকা মেয়েটার বোকা বোকা প্রশ্নগুলো
আর বাইরে বের হতে পারবেনা,
ভিতরেই রয়ে যাব।
তখন আর কেউ তাকে বোকা বলবে না।

বোকা মেয়েটা ওড়নাটা পেয়ে
সেটা গলায় জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে মরে গেল

তখন সবাই হাসতে হাসতে বললো,
দেখেছো,কি বোকা মেয়ে!
একটা ওড়নাও ঠিকমতো পরতে জানেনা!

আমাদের মেয়েরা বোকা নয়।তারা ঠিকঠাক ওড়নায় বুক ঢেকে রাখছে।
আমাদের ছেলেরাও বোকা নয়।তারাও ঠিকঠাক ওড়নার ফাঁকে তাকাচ্ছে।
শুধু পৃথিবীটা বোকা,আর জীবনটা বোকা। বাকি সবাই মস্ত চালাক!

No comments:

Post a Comment