Tuesday, March 31, 2015

শালা হিজড়া

আমাদের সমাজে পুরুষ এবং নারী বাদে আরও এক লিঙ্গের মানুষদের বসবাস করতে দেখা যায়।
রাস্তায় তারা প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। তারা নপুংসক।প্রকৃতির আজব খেয়ালে তারা সবচেয়ে সংখ্যাগুরু দুই লিঙ্গের কোন একটি লিঙ্গের অংশ হিসেবে পৃথিবীতে জন্মায়নি।
নব্য সভ্যতার অন্যতম শিক্ষা হলো সংখ্যালঘুকে এক কোণে ঠেলে দেয়া। আর নপুংসকেরা তো সংখ্যালঘুরও সংখ্যালঘু। কাজেই সবার থেকে লাথি ঝাঁটা খেয়ে এসে কোন সংখ্যালঘু এদেরকেও আরেকটা লাথিটা-ঝাটাটা মারতে পারে।
বাংলাদেশের সমাজেও আমরা এই সভ্যতা খুব চমৎকারভাবে অনুসরণ করে আসছি বলে আমরা সংখ্যালঘু নপুংসকদের এমন কোণঠাসার কোণঠাসা করেছি যে সমাজে আজ তাদের কোন স্থান নেই। তাদের শিক্ষার নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই,স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই,সোজা কথা তাদের অস্তিত্ব নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। তাদের প্রতি আমাদের সমাজের সংগঠিত একটি ভীতি এবং বিতৃষ্ণা আছে । দুঃখজনক হলেও সত্য,এই ভীতি আর বিতৃষ্ণা বেঁচে তারা জীবিকা উপার্জন করে এবং তাদের বেঁচে থাকার আর কোন-ই বিকল্প নেই আর এই বিকল্পহীনতার জন্য কোনভাবেই তারা দায়ী নয়।
তবু আমরা কথ্য ভাষায় এই নিতান্ত নিরুপায়,অসহায় এবং দুঃখী নপুংসকদের হিজড়া বলে ডাকি এবং একইসাথে তাদের পরিচয় টেনে এই হিজড়া শব্দটিকে গালি হিসেবে ব্যবহার করি। আমি এই তথ্য খুব কাছের থেকে জানি কেননা কয়দিন আগে 'পুরুষ হয়েও নারীদের পক্ষ নিয়ে লেখা' একটি প্রবন্ধের কারণে আমাকে এই গালিটি শুনতে হয়েছে।
অথচ হিজড়া শব্দটির শাব্দিক উৎপত্তিস্থল অনুযায়ী এই শব্দের অর্থ নপুংসক নয়। এটি একটি প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় ভাষা 'কান্নাড' থেকে উৎপন্ন এবং শব্দটি আসলেই একটি গালিবাচক শব্দ। এই শব্দের অর্থ হলো অক্ষম বা কাপুরুষ-অর্থাৎ ভীতু।
কিন্তু আজই একটি সংবাদ চোখে পড়লো এবং আমি নিশ্চিত যে সবারই চোখে পড়েছে। তা হলো-একজন মানুষকে কুপিয়ে মেরে ফেলে পালানোর সময়ে দুইজন খুনিকে কয়েকজন নপুংসক মিলে তাকে জাপটে ধরে থামিয়ে দিয়েছিলো। মনে রাখবেন,খুনিদের হাতে ছিলো ধারালো রক্তাক্ত ধারালো অস্ত্র আর তারা নিজেরা ছিলো নিরস্ত্র। তারপরও তারা সাহস করে খুনিদের পথ রুখে দেয়।
একই কায়দায় একই রকম আরেকটি হত্যাকান্ড কিছুদিন আগে ঘটে গেছে দেশের প্রাণকেন্দ্র টিএসসিতে। সেখানেও হাজার হাজার মানুষের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে একজন মানুষকে হত্যা করা হয় এবং তার স্ত্রীকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। টিএসসি বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরা হয় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গন আর সেই এলাকার মানুষদের মনে করা হয় সবচেয়ে সাহসী মানুষ। এরাই একসময় দেশের জন্যে রক্ত দিয়েছে আর দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। সেই তাদের সামনে যখন এমন একটি ঘটনা ঘটে যায়,তাদের থেকে একজনও সামনে আগায় না,হত্যা থামানোর চেষ্টা করেনা।
এমন একটা পরিস্থিতিতে যদি আমি অক্ষম কাপুরুষ অর্থে হিজড়া শব্দটি ব্যবহার করতে চাই,তবে আমার কার ক্ষেত্রে শব্দটির ব্যবহার করা উচিত?
কয়েকদিন আগে খুব কাছের একজন মানুষের সাথে আলোচনা হচ্ছিল যে এই মুহুর্তে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হলে কি হতো?আলোচনা থেকে আমরা সিদ্ধান্তে আসলাম যে-এই মুহুর্তে যদি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হতো তাহলে সবাই তাড়াতাড়ি ফেসবুকে লগইন করে প্রথমে যুদ্ধের সপক্ষে একটা স্ট্যাটাস দিতো। সাথে সাথে পুরো নিউজফিড মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ মার্কা একটা স্ট্যাটাসের জোয়ারের বন্যায় ভেসে যেত।
চারিদিকে দেখা যেতো- #বীর_বাঙ্গালি_অস্ত্র_ধরো
কাজেই কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা মেইনস্ট্রীম মনে করে কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করতো।এদের মধ্যে থাকতো দুই পার্টি-এক পার্টি ডাইরেক্ট রাজাকার,আরেক পার্টি ইনডাইরেক্ট রাজাকার ওরফে সুশীল। ডাইরেক্ট রাজাকাররা বলতো মুক্তিযুদ্ধ বাকওয়াজ ব্যাপার-পাকিস্তান জিন্দাবাদ আর ইনডাইরেক্ট রাজাকাররা বলতো-কোনকিছুর সশস্ত্র সমাধান সমাধান নয় র্মাকা মানবাধিকার  ইত্যাদি ভুগিচুগি। তখন তারা হ্যাশট্যাগ পয়দা করতো #বীর_বাঙ্গালি_অস্ত্র_ছাড়ো_মাথায়_একটু_বুদ্ধি_আনো মার্কা কিছু একটা।
তখন শুরু হতো সীমাহীন দলাদলি। মাঝখানে পড়ে তেজী বাঙ্গালির তেজ এক্কেরে ফুট্টুস। একবার তারা এইখানে লাইক দিবে,একবার ওইখানে লাইক দিবে-অস্ত্র আর কেউ হাতে নিবে না। যুদ্ধ করার তো প্রশ্নই আসেনা।
শেষপর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত হ্যাশট্যাগ হতোঃ #যুদ্ধ_কোন_সমাধান_নয়
এরমধ্যে অবশ্যই মুখ সূচালো করে সেলফি তুলনে ওয়ালারা সেলফি তুলতো।হ্যাপিনেস ইজ-বালুবাসা ইজ-মার্কা স্ট্যাটাস দেনেওয়ালারা স্ট্যাটাস দিতো আর মহামতি 'নিরপেক্ষ' লাইকার-শেয়াররা দুইপক্ষের স্ট্যাটাস শেয়ার আর লাইক দিয়ে বেড়াতো।
মাঝখানদিয়ে আমাদের সাধের মুক্তিযুদ্ধটা '#মুক্তিযুদ্ধ' ধরণের ইন্টারনেটের একটা কোনে একটা স্তোকবাক্য হয়েই পড়ে থাকতো।
যদি কারো মনে হয়ে থাকে যে আমি কথাটি বাড়িয়ে চাড়িয়ে বলছি তাহলে তাদের জন্য সমবেদনা এবং চক্ষু হাসপাতালে ঘুরে আসার পরামর্শ থাকলো।
আমরা জাতিগতভাবে এখন তিনটি ধারায় ভাগ হয়ে গেছি। একটি ধারা হলো মুখ সূচালো সেলফিওয়ালা এক্সপোর্ট কোয়ালিটি প্লাস্টিক। দ্বিতীয় ধারা হলো মহাবুঝদার চরমপন্থী। এদের কাজ ডানদিকে বা বামদিকের চরম চরম গরম গরম কথাবার্তা লিখে ফেইসবুক গরম রাখা। তৃতীয় ধারা হলো নিরপেক্ষ সেলেব্রিটি-যারা এই সবকিছুর ঊর্ধে থেকে এমন এমন লুতুপুতু-কুতুকুতু কথাবার্তা লেখার চেষ্টা করেন,যাতে করে কেউ চেতে না যায় আর সবাই লাইকও দেয়।
আমি নিশ্চিত টিএসসির সেই ঘটনার দিন এই তিন ধারার প্রত্যেক ধারার একমুঠো করে মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মধ্যে কেউই খুনীদের ধরার জন্য আগাননাই কারণ সবাই অনেক বেশি প্রোফাইল সচেতন। সবাই বিতর্ক করতে চান কিন্তু কেউ বিতর্কে জড়াতে চান না।কাজেই কেউই খুনিগুলোকে ধরতে সামনে এগোলেন না।
এগোলেন কারা? এই তিন চমৎকার ধারার থেকে সিস্টেমেটিক্যালি দূরে ঠেলে দেয়া তৃতীয় লিঙ্গের কিছু 'মানুষ'। যাদের পাবার কিছু নেই-হারাবার কিছু নেই-শুধু বুকের ভিতর এখনো হৃদপিন্ডটি রয়ে গেছে।
আর আমরা পরদিন পেপারে ছাপলাম যে খুনিদেরকে হাতেনাতে ধরেছেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু হিজড়া।
এরকম একটা সময় আমাদের আত্মোপলব্ধির একটি সুযোগ করে দেয়। আমরা কারা,আর আমরা নিজেদেরকে যাদের থেকে সযত্নে আলাদা করে রেখেছি তারাই বা কারা?
আমরা যাদের বিকৃত মানুষ বলে মনে করে দূরে সরিয়ে রেখে নিজেদের চমৎকার মনে করছি,প্রকৃতপক্ষে তাদের মনুষ্যত্বই আমাদের চেয়ে বেশি নয় কি?
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ বংশধরের শরীরে আমরা কারা বাস করছি?
আসলেই কি আমরা বীরপ্রসূ বাংলার সন্তান?আমাদের পরিচয় কি?আমরা কি আদৌ মানুষ?
নাকি সেলফি কুইন আর জ্ঞানতাপস আর ফেবু সেলেব্রিটি হতে গিয়ে আমরা গোড়ার মানবতাটুকুই ভুলে গেছি?
মানুষ হয় আশায়-ভালোবাসায়-সহমর্মীতায়-সাহসে-একতায়।আমরা যে ছন্নছাড়া জীবে পরিণত হয়েছি তার ভিতরে এর ছিটেফোঁটাও নেই।
আমার মনে হয় নপুংসকদের হিজড়া বলার আগে আমাদের একবার আয়নার দিকে তাকাবার সময় এসেছে।নপুংসকদের হিজড়া না ডেকে আমাদের আশেপাশে যারা সারাদিন তিলার্ধ বিষয় নিয়েও বিতর্ক করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে কিন্তু সুকৌশলে গা বাঁচিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে চলে তাদেরকে হিজড়া বলে ডাকার সময় এসেছে।
নিজের এবং নিজেদের সমষ্টিগত অক্ষমতা আর কাপুরুষতার দিকে তাকিয়ে ঘৃণাভরে বলার সময় এসেছে-শালার হিজড়া!  

Monday, March 30, 2015

মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ-রচনার প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশ্যে

গতকাল রাতে রচিত 'মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ' শীর্ষক রচনা নিয়ে একটু ব্যখ্যা প্রদান করার প্রয়োজন মনে করছি।
আমি কখনই কাউকে নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াতে বলিনি বা পোশাক পরিচ্ছদের অভ্যাসও পরিবর্তন করতে বলিনি।
প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা পারিবারিক এবং ধর্মীয় শিক্ষা থাকে,সেই শিক্ষা থেকেই তারা তাদের পোশাক পরিচ্ছদের অভ্যাস গড়ে তোলে। সেই পোশাক পরিচ্ছদের অভ্যাসের একটি শালীনতার মাত্রা অবশ্যই রয়েছে এবং সেটা পরিবর্তন করতে বলার আমি কেউ না।
আমি শুধু যেটি বলতে চেয়েছি তা হলো,একটি নির্দিষ্ট স্বাভাবিক অঙ্গকে একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গকে নিগৃহীত করবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হোক।
আমি একজন ছেলে হিসেবে বাকি ছেলেদের জানাতে চেয়েছি যে একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে সমাজে বেঁচে থাকা ঠিক কতটা কষ্টকর।
হিসেবটা খুব সহজ, ধরুণ আপনার সামনে একজন অপরিচিত মানুষ দীর্ঘক্ষণ বিনাকারণে আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন।আপনার অস্বস্তি লাগবে। এখন চিন্তা করুন সারা দুনিয়াজুড়ে হাজারখানেক মানুষ সারাক্ষণ আপনার বুকের দিকে তাকিয়ে আছে!
কি ভয়াবহ আতঙ্ক! বুঝতে পারছে?
আসলে পুরুষ হিসেবে জন্মানোর কারণে আমাদের পক্ষে এটি বুঝে ওঠা কষ্টকর এই কষ্টটি আমরা করে উঠতে চাইনা বলেই আমরা নারীর যন্ত্রণাটি বুঝে নারীর পাশে দাড়াইনা-যেখান থেকে সকল নারী নিগ্রহের ব্যাপারগুলো উঠে আসে।
কে কোনটা ঢাকবে কোনটা ঢাকবে না-এটা শিক্ষা দেবার আমি কেউ না।এটা তাকে তার পরিবার,সমাজ,ধর্ম খুব চমৎকারভাবে শিখিয়ে যাচ্ছে। আমি কেবল একজন বালক হয়ে জন্মানোর কারণে আজীবন নিজে বালিকাদের অবর্ণনীয় কষ্ট উপেক্ষা করে এসে মাত্র কিছুদিন আগে এই ভয়াবহ সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছি বলেই বাকি বালকদের জায়গা থেকে একটি বালিকার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মতন যন্ত্রণাটির কথা বলার চেষ্টা করেছি
পৃথিবীর কোন ধর্ম বা নীতি বা আদর্শ কি কারো লজ্জাস্থানের দিকে চোরা চোখে তাকিয়ে থাকার শিক্ষা দেয়?দৃষ্টি সংযত করার বিধান বারংবার শুনেছি আমরা তবু আমরা দৃষ্টি সংযত করিনা! কেনো? কারণ আজন্ম পুরুষ হয়ে থাকার কারণে আমরা মেয়েদের যন্ত্রণাটুকু বুঝতে পারিনা।তাই আমি কেবল একজন বাড়ন্ত মেয়ের স্বাভাবিক একটি শারীরিক অঙ্গ নিয়ে ভোগ করা নিদারুণ দূর্ভোগ আর কষ্টের কথা তুলে ধরতে চেয়েছি।
একজন মানুষের একটি সুস্থ স্বাভাবিক অঙ্গকে তাকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে আমি দাড়াই। একজন মানুষকে তার নিজের শরীরকে ঘৃণা করার কারণ যারা হয়-তাদের বিরুদ্ধে আমি দাড়াই। তার লিঙ্গ দেখে নয়-তার যন্ত্রণা দেখে আমি দাড়াই।
আজকে যদি একটি ছেলের একটি স্বাভাবিক অঙ্গ নিয়ে তাকে অত্যাচার করার ব্যবস্থা করা হয় এবং সে সেটি 'যথাযথভাবে ঢেকে রাখার পরেও' যদি তাকে এটি নিয়ে এমনভাবে হেয় করা হয় যে তার নিজেকে মানুষ মনে না হয়ে অর্ধমানব বা বিকৃত মানব গোছের কিছু মনে হয়-আমি অতি অবশ্যই সেই ঘটনার বিরুদ্ধেও দাঁড়াবো। কিন্তু এমন কোন পরিস্থিতি আজও আসেনি।হাজার বছর ধরে চলে এসেছে মেয়েদের স্তনের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার বিধান।
আমি আবারও বলছি-পৃথিবীর কোন ধর্ম বা কোন বিধান কারো লজ্জাস্থানের দিকে অপ্রীতিকরভাবে তাকিয়ে থাকার বৈধতা দেয়না-সেই অঙ্গ নিয়ে তাকে আক্রমণ করার অধিকার দেবার তো প্রশ্নই আসেনা।
আমার কথা বলার একক কারণ হলো একজন বাড়ন্ত মেয়ের কষ্টটাকে তুলে ধরা এবং একজন ছেলে হয়ে একজন মেয়ের দৃষ্টি দিয়ে জগৎটি দেখার সুযোগ করে দেবার চেষ্টা করা। এই সহজ ব্যাপারটিকে ঘোলাটে করে তুলে নগ্নতাকে বৈধতা দেবার মতন আজেবাজে দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক।
সালেহীন খুব চমৎকার একটা কথা বললো গতকাল, পর্দা কখনোই একমাত্রিক না,এটা দ্বিমাত্রিক।কেউ যদি মনে করে থাকেন যে কোন ধর্ম বা কোন আদর্শ তাকে কোন মানুষের কোন লজ্জাস্থানের দিকে অপ্রীতিকরভাবে তাকিয়ে থেকে সেই সুস্থ স্বাভাবিক অঙ্গটিকে তাকে নিগৃহীত করবার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার বৈধতা দেয় তবে সে অবশ্যই ভুল। এই ধরণের চিন্তাধারা খুব অপ্রীতিকর এবং দূর্ভাগ্যজনক এবং ঠিক এই কারণগুলোতে আমরা নারীদের অধিকার স্থাপন করতে পারছিনা।
যদি আমরা দৃষ্টি সংযত করার ধর্মীয় বিধানকে উপেক্ষা করতে থাকি এবং অনৈতিক দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক চলনবলনকে বাধাগ্রস্থ করতে থাকি তাহলেই বরঞ্চ ধর্মের অপমান হয় সবচেয়ে বেশি এবং ধর্মবিদ্বেষীরা আমাদের অধার্মিক আচরণকে ধর্মের ত্রুটি হিসেবে তুলে ধরার একটি ছুতো পায়।
আমার পর্যবেক্ষণের স্বাভাবিক দৃষ্টিকোনটি ছিলো এই যে-যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পুরুষরা নিজে একজন নারীর জায়গায় দাঁড়িয়ে জীবনটিকে দেখতে পাবোনা,ততদিন পর্যন্ত আমরা নারীর কষ্টটি বুঝতে পেরে নারীর পাশে দাঁড়াতে পারবো না।
যারা মনে করছেনা আমি নগ্নতাকে সমর্থন করছি বা কারো পোশাক আশাককে অমার্জিত করতে বলছি তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থি। অযোগ্য ব্যখ্যাক্ষমতার কারণে হয়তো আমি আমার বক্তব্যটি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি এবং আপনারা আমার কথাটিকে ভুল বুঝেছেন।
কারো সুস্থ স্বাভাবিক অঙ্গকেই তাকে নিষ্পেষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয় এবং আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থানে এমন অনুচিত নীতি-আদর্শ-ধর্মবিরোধী দুর্ভাগ্যজনক আচরণের কোপানলে নারীদের পড়তে হয় বলে আমি নারীদের জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে পুরুষদের নারীদের কষ্টটি উপলব্ধি করার অনুরোধ জানাচ্ছি। নিজেকে নারী হিসেবে কল্পনা করতে যদি কষ্ট হয় তবে কল্পনা না করে পর্যবেক্ষণ করুন।
যখন আপনার মা বা বোনকে যথাযথ শালীনতা বজায় রাখার পরও একটি স্বাভাবিক শারিরীক অঙ্গের দিকে অপ্রীতিকর দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে নিগৃহীত করা হয়-তখন তার কেমন লাগে-সেটি ভাবুন।
লাঠিসোটা নিয়ে বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যাবার আগে আসুন আরেকটিবার ভাবি।কোনভাবে কি পাশাপাশি দাঁড়ানো যায়না? একই দেশেরই তো মানুষ আমরা-একসাথে কি দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়না?
বিরোধিতা হয়তো সহযোগিতার চেয়ে সহজতর-কিন্তু বিরোধিতা ফলাফলহীন।
তারচেয়ে বরং ফলপ্রসূ সহযোগিতার দিকে আগাবার চেষ্টা করি।

Sunday, March 29, 2015

মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ!

মেয়েটির বুকে ছেলেটির চোখ! 
ইশ কি বাজে একটা কথা! ছি! ছেলেটা শেষ পর্যন্ত কি চটি লেখা শুরু করলো?
নাকি একাউন্ট হ্যাক হয়েছে?
না,কোনটিই না।আমি জেনে শুনে বুঝেই স্তনের কথা বলছি। আমি লজ্জার মাথাই খেয়েছি। আমি সবার সামনে স্তনেরকথাই বলবো আজকে।
জ্বী,আমি স্তনের কথা বলছি।
সেই অঙ্গটির কথা বলছি যেটির কারণে আমি আজকে বেঁচে আছি।সেই অর্থে সবচেয়ে আশীর্বাদময় অঙ্গ।
আবার সেই অঙ্গটির কথা বলছি যে অঙ্গটির কারণে একটি মেয়ে চৌদ্দ-পনের বছরের পর থেকে আর কোনদিন সাধারণ মানুষের মতন বাঁচতে পারেনা। সেই অর্থে সবচেয়ে অভিশাপময় অঙ্গ।

এই ভয়াবহ আশির্বাদ আর অভিশাপী অঙ্গ নিয়ে কথা বলার আগে আমার নিজের শরীরের একটি অঙ্গের কথা বলে নেই।

ভুঁড়ির কথা বলছি।
আমি একজন মোটা মানুষ।আমার উদর স্ফীত এবং থলথলে।
হাটতে গেলে আমার সামনে আমার পেট হাটে। বসতে গেলে ভুড়ি শক্ত হয়ে ফুলে ওঠে,জামা ঠেলে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে। আমার ভুড়ি মোটামোটি তিন ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি অর্ধবৃত্তাকার নিরেট চর্বির গোলক।
গোলকটি খুবই অস্বাস্থ্যকর,অপ্রাকৃতিক এবং কদর্য। এবং খুব সম্ভবত সেই গোলকটির জন্য আমার গড় আয়ুস্কালের প্রায় দশ-বিশবছর আগে মৃত্যু হবে।
এরকম একটি মৃত্যুময় গোলা শরীরের মাঝে বয়ে বেড়ানো খুব ভয়ের ব্যাপার।তারচেয়ে বড় কথা,খুবই লজ্জার ব্যাপার। কারণ এই ভুড়ির অবস্থান আমার নিজের দোষ। আমি যদি একটু মন থেকে চাইতাম,তাহলেই এই ভুড়িটা থাকতো না। ভুড়িটি প্রমাণ করে যে আমি একজন অলস,অস্বাস্থ্যসচেতন এবং অকর্মণ্য মানুষ।

শুধু আমি নই,আমাদের সমাজে অনেকেই এই ভুঁড়ির অধিকারী।অবিশ্বাস্য হলেও সত্য-আমার চেয়েও ভয়াবহ ভুড়ি নিয়ে অনেকে চলাফেরা করে। আমাদের সমাজে এই ভুঁড়ি অনেকটুকুই গ্রহণযোগ্য আর স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।
কাউকে কোনদিন ভুঁড়ির কারণে মাথা নিচু করে হাঁটতে দেখিনি।

মাথা নিচু করে আমি হাঁটতে দেখেছি চৌদ্দ-পনের বছরের মেয়েদের। ভুল ক্রোমোসম নিয়ে জন্মানোর অভিশাপে জন্মানোর পর থেকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে আর দশটা মানবসন্তানের মতন হেসে খেলে বড় হতে হতে-হঠাৎই তার বুকটা একটু উঁচু হতে শুরু করে।
সাথে সাথে সে শিখে ফেলে কি ভয়াবহ লজ্জার একটা জিনিস এটা!কি ভয়াবহ গোপন।
নিচে একপরত কাপড় দিয়ে চেপে পিষে লুকিয়ে রাখতে হবে-তার উপরে আরো এক পরত কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে-তারও উপরে আরো এক টুকরো আলগা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।তারপরও একটু উঁচু হয়ে থাকবেই। ততটুকুর দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকবে রাস্তার সবাই। একশ পরত কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলেও হাটার সময় ঠিকই হাতের নিচ থেকে চোরা চোখে তাকিয়ে দেখে নেবে নিষ্পাপ মেয়েটির স্তনযুগল।
আর সেই দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নিষ্পাপ মেয়েটি মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে হনহন করে হাঁটতে থাকবে।ভয়ে তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে যাবে। শীষের শব্দ শুনে সে কান চেপে ধরার জন্য হাত তুলতে যাবে-তারপর আবার ভাববে-হাত তুলতে গেলে যদি ওড়না সরে যায়!
কি ভয়াবহ আতঙ্ক! কল্পনা করতে পারা যায়!
অথচ স্তন খুবই স্বাভাবিক একটি অঙ্গ। আমার মায়ের আছে এবং আপনার মায়ের আছে এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কথা-শীষ দেয়া ছেলেটার মায়েরও এবং আছে দেখেই আমরা আছি। সেই স্তনও যথেষ্ঠই স্ফীত-কারণ স্ফীত না হলে সেটি আমাদের শৈশবে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন করতে পারতো না।
সেই স্তন জননীর হবার আগে কোনদিন কোন কুমারীর ছিলো।আর সেই কুমারীরও তখন সেই স্তনের গলা টেপা শিখতে হয়েছে এইরকম শীষ দেয়া অন্য যুবকদের জন্য।
যুগ পেরিয়ে যায়-শীষ তবু থামেনা! ভয়ানক এক শীষ সময়ের পর্দা ছিড়ে কানে ঝনঝন করে যায়।
এই ছেলেগুলো শীষ কেনো দিচ্ছে? কে তাদের শীষ দিতে শিখিয়েছে?
স্তন উঁচু এবং হাটার সময় সামান্য দোলে-এজন্য শীষ দিচ্ছে?
স্তনের চেয়ে তো ভূড়ি অনেক উঁচু! হাটার সময় ভুঁড়ি অনেক বেশি দোলে-তাই দেখে ওরা শীষ দেয়না কেনো?
স্তনের চেয়ে বরং ভুঁড়ি দেখে শীষ দেয়াই বেশি যৌক্তিক। ভুঁড়ি একটা অস্বাভাবিক দৃশ্য-স্তন নয়!স্তন স্বাভাবিক!

তবু আমাদের সমাজের হাজার হাজার স্থূলকায় মানুষের অপ্রাকৃতিক,অপ্রয়োজনীয় এমনকি জীবনঘাতি ভুঁড়ির দৃশ্য আজ খুব স্বাভাবিক। কেউ সেটি আলগা একটা কাপড়ে ঢেকে দিতে আসেনা।
কিন্তু অতি প্রাকৃতিক, অতিপ্রয়োজনীয় এমনি জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য একটি অঙ্গকে যখন এতই অস্বাভাবিক যে সেইটাকে তিন পরত কাপড় দিয়ে চেপে পিষে লুকিয়ে রাখতে হয়।
এই চেপে পিষে লুকিয়ে রাখার থেকেই একটা বাচ্চা হঠাৎ করে মেয়ে হয়ে যায়। জীবনের অর্ধেক সময় সে কাটিয়ে দেয় তার বুক ঢাকতে ঢাকতে। দরজা খোলবার আগে তার দৌড়ে ওড়না খুঁজতে হয়, ছাদে যাবার আগে ওড়না খুঁজতে হয়, এমনকি বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাবার সময়ও ওড়না খুঁজতে হয়। নাহলে সেই শুভাখানকি বন্ধুটিই জ্ঞান দিয়ে বসবে-তোর তো এরকম কাপড় পরা উচিত না। ওরকম করে কাপড় পর! কাপড়ের উপর ওড়না পর।
পরেরদিন মেয়েটা ওড়না পরে বের হবে।তখন শুভাখানকি বলবে-দোস্ত তোর ওড়নাটা সরে গেছে।ঠিক কর।
মেয়েটি ততদিনে এতই মানসিকভাবে ভোঁতা হয়ে গেছে যে সে জিজ্ঞেসও করবে না-আমার ওড়না যে বুকে নেই,সেটা তুই দেখলি কি করে? তুই কি তাকিয়ে ছিলি?
কারণ মেয়েটি জানে,সবাই তাকিয়ে আছে।সবাই তাকিয়ে থাকে।কারো আর কোন কাজ নেই তাকিয়ে থাকা ছাড়া। তাকিয়ে থাকাই সবার কাজ,আর সবার থেকে লুকিয়ে রাখাই মেয়েটার কাজ।কারণ মেয়েটারই তো দোষ! মেয়েটারই তো ভুল। তার স্তন গজালো কেন?
মেয়েটির সহ্য করতে হবে। সহ্য করে বড় হতে হবে। এরপর বিয়ে করতে হবে। এরপর একদিন বাচ্চা হবে। তখন সেই বাচ্চার কান্না আর এই পিষ্ট,দলিত লুকায়িত স্তনযুগল ছাড়া আর কেউ থামাতে পারবে না।
ইশ! একদিন যদি পৃথিবীর সব মা রা একত্রে মিলে ঠিক করে যে তারা তাদের নবজাতককে দুধ খাওয়াবে না, না খাইয়ে স্বামীর হাতে দিয়ে বলবে-নাও-তোমরা না মহান পুরুষ জাতি! এবার থামাও দেখি পারলে কান্না! মাতৃদুগ্ধ বের করো পারলে তোমার মহান পৌরুষত্বের অহংকার টিপে টিপে।
কিন্তু এই কথাগুলো মায়েরা বলবে না।কারণ মায়েরা মেয়ে থাকতেই মেয়ে হওয়া শিখে গেছে। তারা বুদ্ধিমতী-বিচক্ষণ।সমাজে টিকে থাকতে শিখেছে। তারা সমাজে টিকে থাকে, টিকে থেকে সন্তান সন্ততীর জন্ম দেয়। সন্তান মেয়ে হলে সে আবার বুক পিষে মাথা নিচু করে হাটে,ছেলে হলে অচেনা অজানা একটা মেয়ের ওড়নার ফাঁকে তাকায়।
এভাবে হাজার হাজার বছর ধরে চলছে। কেউ প্রশ্ন করেনা। ছেলেরা তো করেইনা-তারা মহাসুখী! মেয়েরাও করেনা। কারণ তারা সবাই ঐ বোকা মেয়েটা হতে চায়না-

এক দেশে ছিল এক বোকা মেয়ে,

সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো।
কারণ,মেয়েটা খালি বোকা বোকা প্রশ্ন করতো,
প্রশ্নগুলো বাকি সবাইকে বোকা করে দিতো।
এমন প্রশ্ন করতে নেই,বোকা মেয়েটা জানতোনা
তাই বোকা মেয়েটা এতো বেশি বোকা ছিলো।

কিন্তু বোকা মেয়েটির মা ছিলো বুদ্ধিমতি
তিনিও একদিন বোকা ছিলেন;এখন বুদ্ধিমতি
তাই তিনি জানেন
কিভাবে বোকা মেয়েকে বুদ্ধিমান বানাতে হয়
তিনি অনেক খুজে খুজে
একটা বহুমূল্য ওড়না কিনলেন মেয়ের জন্য।
ভাবলেন,ওড়না দিয়ে কান,মাথা,বুক পেচিয়ে দিলে
বোকা মেয়েটার বোকা বোকা প্রশ্নগুলো
আর বাইরে বের হতে পারবেনা,
ভিতরেই রয়ে যাব।
তখন আর কেউ তাকে বোকা বলবে না।

বোকা মেয়েটা ওড়নাটা পেয়ে
সেটা গলায় জড়িয়ে ফাঁস দিয়ে মরে গেল

তখন সবাই হাসতে হাসতে বললো,
দেখেছো,কি বোকা মেয়ে!
একটা ওড়নাও ঠিকমতো পরতে জানেনা!

আমাদের মেয়েরা বোকা নয়।তারা ঠিকঠাক ওড়নায় বুক ঢেকে রাখছে।
আমাদের ছেলেরাও বোকা নয়।তারাও ঠিকঠাক ওড়নার ফাঁকে তাকাচ্ছে।
শুধু পৃথিবীটা বোকা,আর জীবনটা বোকা। বাকি সবাই মস্ত চালাক!